অমর সাহা,কলকাতা:
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা খুব কাছেই। কলকাতায় এ উৎসব পালনের ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে এবার কলকাতার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজার আনন্দ ম্লান হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কলকাতার বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা এখনো ঠিক করে উঠতে পারেননি, কীভাবে তাঁরা পূজার আয়োজন করবেন। তা ছাড়া করোনার আবহে দুর্গাপূজায় স্বাচ্ছন্দ্য থাকবে কি না, থাকলেও কতটুকু থাকবে, তা নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা দোলাচলে।
আগামী ২৩ অক্টোবর কলকাতায় ঐতিহ্যবাহী দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার কথা। কলকাতার দুর্গাপূজা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ আসেন কলকাতায় এ পূজা দেখতে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনো দুর্গাপূজার গাইডলাইন ঘোষণা করেনি। তবে এটুকু জানা গেছে, দুর্গাপূজা হচ্ছে কলকাতায়। তবে তা হবে অনাড়ম্বরে।
এবার আর নানা থিম বা ভাবনা নিয়ে বড় বড় দুর্গাপূজা নয়। এবার ক্লাব কর্মকর্তাদের অধিকাংশই ফিরে যাচ্ছেন সেই সাবেকি পূজায়। ফিরে আসছে একচালা প্রতিমা। ছোট হয়ে যাচ্ছে দুর্গাপ্রতিমার উচ্চতা। খরচ কমছে ৫০-৬০ শতাংশ। থাকছে না আগের মতো জৌলুশ, আলোর বন্যা। থাকছে না ঢাকঢোলের ডামাডোল। সবকিছুই এবার ম্লান হতে যাচ্ছে করোনার কোপে।
পূজা কমিটির কর্মকর্তারা বলছেন, এবার আর পূজায় জৌলুশ নয়। শুধুই প্রার্থনা—‘মা আমাদের সুস্থ রেখো। করোনার হাত থেকে রক্ষা করো। দেশকে করোনার বিপদ থেকে মুক্ত করো। বিশ্বে শান্তি আনো।’
কলকাতার দুর্গাপ্রতিমা নির্মাণের প্রধান এলাকা কুমারটুলি। কলকাতার শোভাবাজার এলাকায় কুমারটুলির অবস্থান। কলকাতার সব বড় প্রতিমা নির্মাণ হয় এই এলাকায়ই।
কলকাতার পর প্রতিমা নির্মাণে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নদীয়ার কৃষ্ণনগর। কলকাতার বহু ক্লাব কৃষ্ণনগর থেকে প্রতিমা নিয়ে আসে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে উঠে আসে কুমারটুলির নাম। এখানে আছে ৩৫০টির মতো প্রতিমা তৈরির ঘর। রয়েছে শিল্পীদের নিজস্ব দোকান। এখানে কাজ করেন সাড়ে চার হাজার শিল্পী। প্রতিবছর পূজার মৌসুমে এখানে চলে আসেন রাজ্যের নানা প্রান্তের আরও বেশ কিছু শিল্পী। কিন্তু এবার এসবের অনেক কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এবার করোনার কারণে বহু শিল্পী আসতে পারেননি। তবুও থেমে নেই কুমারটুলিতে প্রতিমা নির্মাণের কাজ।
কুমারটুলির নামী শিল্পী মিন্টু পাল গতকাল বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এবার বিভিন্ন থিমের পূজার ধারণা বদলে গেছে। বিভিন্ন ক্লাব মাঝারি পূজায় মন দিয়েছে। প্রতিমা নির্মাণ করছে একচালায়। কমিয়ে দিয়েছে প্রতিমার উচ্চতা। ১৫ ফুট থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে ৮-১০ ফুটে।
মন্টু পাল বলেন, এবার কলকাতার ৭০ শতাংশ প্রতিমা নির্মাণ হচ্ছে ছোট আকারে। ছোট প্রতিমার বায়না তাঁরা ইতিমধ্যে পেলেও সর্বজনীন বড় পূজার বায়না পেয়েছেন মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। যেখানে আগে বিভিন্ন ক্লাব এক থেকে দেড় লাখ রুপির প্রতিমা নিত, এবার সেখানে তারা ৩০-৪০ হাজার রুপির প্রতিমা নিচ্ছে।
কলকাতা পুলিশ আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে এখনো কোনো গাইডলাইন প্রকাশ করেনি। তবে খোঁজ নিতে শুরু করেছে কোথায় বড় প্রতিমার পূজা হচ্ছে, কোন পূজা কীভাবে হচ্ছে? থিম পূজা কতটা হচ্ছে? এবার নতুন থিম নিয়ে কোনো ক্লাব এগোচ্ছে কি না প্রভৃতি। বিশেষ করে কলকাতার সব নামী পূজা এবার কীভাবে করছে, তারই খোঁজ নিতে শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ।
এটুকু জানা যাচ্ছে, করোনা বিধি মেনেই অনুষ্ঠিত হবে এবারের দুর্গাপূজা। প্রতিটি পূজামণ্ডপে স্যানিটাইজারের টানেল থাকবে। থাকবে জায়ান্ট স্ক্রিনও।