অবশ্যই বিগত দিনে আপনি রজব তাইয়িব এরদোগানের অনেককিছু দেখেছেন এবং তার সম্পর্কে অনেককিছু শুনেছেন। তিনি ইসলামের মহান এক মুজাহিদ এবং মানববন্ধু নেতা। একইসঙ্গে পবিত্র কোরআনের একজন সম্মানিত হাফেজও, অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী কন্ঠে কোরআনে কারিম তিলাওয়াত করতে পারেন। মহান আল্লাহ তাকে সুমিষ্ট কন্ঠস্বর দান করেছেন।
ভীনদেশীদের প্রতি প্রেসিডেন্ট এরদোগান সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল মনোভাব পোষণ করেন। তুরস্কের কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের ভিত্তিতে দেশটিতে আমার একাধিকবার সফরের সুযোগ হয়েছে। ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের বিবেচনায় তুরস্ক বিশ্বের অন্যতম একটি সুন্দর দেশ- যার প্রাণকেন্দ্র ইস্তাম্বুল। অসংখ্য প্রাচীন প্রাসাদ, ঐতিহাসিক জাদুঘর, সরাইখানা এবং খাবার-দাবারে তুরস্কের সমকক্ষ কোন দেশ মানচিত্রে নেই।
তুর্কিজাতি এবং তুরস্কের চার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য রয়েছে। শুরুতে তুরস্ক ছিলো এশিয়ার অংশ। ঈসায়ী একাদশ শতাব্দীতে তারা আনাতোলিয়ায় বসতি স্থাপন করে। ১২৯৯ সালে উসমান ইবনে আরতুগ্রুল তুর্কিদের জন্য স্বতন্ত্র সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। খুব দ্রুত সময়ে এই সরকারের ক্ষমতা বিস্তৃত হতে থাকে এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে এসে উসমান ইবনে আরতুগ্রুল ‘উসমানী সাম্রাজ্যে’র ভীত রচনা করেন।
প্রায় ৬২৩ বছর পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব হয়। তারা পূর্ব ইউরোপ, জাজিরাতুল আরব, চীনের তুর্কিস্তান সহ বিরাট এক ভূখণ্ডে শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। ১৪৫৩ সালে সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম জৌলুশপূর্ণ শহর ইস্তাম্বুল ( কনস্টান্টিনোপল) জয় করেন। কিন্তু ইহুদি খৃষ্টানদের বহুমুখী ষড়যন্ত্র এবং নিজেদের মধ্যে স্বার্থান্বেষী কিছু দালালদের খেয়ানতের কবলে পড়ে একসময় বিশাল শক্তিশালী এই সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে ১৯২৩ সালে এর চূড়ান্ত পতন হয়।
পতনেরও প্রায় শতবর্ষ হতে চললো। এরইমধ্যে তুরস্ক তার ইসলামি পরিচয় ও ইতিহাস হারিয়ে ফেলেছিল। মাঝে কয়েকজন শাসক যাও নিজেদের হারানো ঐতিহ্য ও ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরার প্রয়াসী হয়েছিলেন- তারাও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন- এদেরমধ্যে সবশেষ ইসলামপ্রিয় শাসক ও নেতা হচ্ছেন রজব তাইয়িব এরদোগান।
তিনি তুরস্কে শুধু ইসলামি পরিচয় প্রতিষ্ঠায়ই সময় অতিবাহিত করেননি; অর্থনীতি, সামরিক ক্ষেত্রেও দেশটি তার হাত ধরে অনেক উন্নতি লাভ করেছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে সুস্থ ও সুখী রাখুন, দীর্ঘায়ু দান করেন এবং আদর্শিক নেতৃত্বের মহানায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। আমিন।
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কিছু অর্জন:
২০১৩ সালে তুরস্কের মোট দেশজ সম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো এক ট্রিলিয়ন ও একশো মিলিয়ন ডলার-যা মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্মিলিত উৎপাদনের সমান।
তুরস্ক অর্থনীতিতে ২০ টি বিশ্ব শক্তির (জি -২০) কাতারে যোগ দিয়েছে।
তুরস্ককে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এরদোগান ২০২৩ সালকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তিনি তার এই প্রয়াসে সফল হন কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
এরদোগান সরকারের আমলে নির্মিত ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরটি ইউরোপের বৃহত্তম বিমানবন্দর। এখানে দৈনিক ১২৬০ টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এছাড়াও, এখানে অভ্যন্তরীণ অন্তত ৬৩০ টি বিমান আসা-যাওয়া করে। তুর্কি এয়ারলাইনস টানা তিন বছর বিশ্বের সেরা এয়ারলাইনের খেতাবে ভূষিত হয়েছে।
এরদোগান সরকার ১২৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৮৯ টি স্কুল, ৫১০ টি হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। দেশব্যাপী প্রায় তিন বিলিয়ন ছায়াদার ফলদার গাছ রোপন করেছে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়া, রাজনৈতিক সাফল্য তো সবার সামনেই।
-ডেইলি জংয়ে প্রকাশিত পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ ডক্টর আবদুল কাদির খানের কলামটি উর্দু থেকে অনুদিত (সংক্ষেপিত)