নিজস্ব প্রতিবেদক♦♦
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার অন্তর্গত গোপালদী পৌর সভায় অবস্থিত গোপালদী নজরুল ইসলাম বাবু কলেজের অধ্যক্ষ মো: আলমগীর হাসানের বিরুদ্ধে তার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
২০১৯ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে একের পর এক মনগড়া সিদ্ধান্ত, অদরদর্শিতা ও নানা অনিয়মের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিতর্কিত। প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীরা জানান নিয়মিত গভর্নিং বডি থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ মো: আলমগীর হাসানই যেন শেষ কথা।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো হলো: ১। অবৈধ পন্থায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ : জনাব মো: আলমগীর হাসান কলেজে ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান ২০১০ সালে। পরবর্তীতে চাটকারীতার মাধ্যমে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও নারায়ণগঞ্জ – ২ আসনের অর্থাৎ আড়াইহাজারের জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাব এর সান্নিধ্যে আসেন। প্রতিষ্ঠাতা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: মনির হোসেন ৮/০৮/২০১৮ তারিখে ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করলে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে মো: আলমগীর হাসান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ৯/০৮/২০১৮ তারিখে নিয়োগ পান। এবং ১/০৪/২০১৯ তারিখের গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে ১৬/০৪/২০১৯ তারিখে ‘দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ’ ও ‘সময়ের নারায়ণগঞ্জ’ পত্রিকায় অধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব মো: আলমগীর হাসান নিজেই একজন প্রার্থী বিধায় ২২/০৪/২০১৯ তারিখের গভর্নিং বডির সভায় উক্ত কলেজের পে․রনীতি ও সশাসন বিষয়ের প্রভাষক জনাব শিল্পী দেবনাথকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হয়। অধ্যক্ষ নিয়োগের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২/০৫/২০১৯ তারিখে গভর্নিং বডির সভাপতি ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু এর সহধর্মিনী ডা: সায়মা আফরোজ স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র নির্বাচিত প্রার্থী হিসেবে জনাব মো: আলমগীর হাসানকে প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য কলেজটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে “বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এম.পি.ও নীতিমালা – ২০১৮” এর আলোকে মে’২০২০ সালে MPO ভক্তির ঘোষনা হয় যা ১/০৭/২০১৯ সাল হতে কার্যকর হয়। সেই সাথে জনাব মো: আলমগীর হাসানও অধ্যক্ষ হিসেবে এমপিও ভক্ত হন যা এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর ১১.২ বিধি বহির্ভত। যেহেত জনাব মো: আলমগীর হাসানের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ ২/০৫/২০১৯ সালে অর্থাৎ ১২জন,২০১৮ এর পর তাই উক্ত নিয়োগ বিধি-১১.২ এর পরিপন্থী বলে এলাকাবাসীর নিকট প্রতীয়মান হয়।
২। অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায় : ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে ২৪ মাসের বেতন আদায় করা হয়। অর্থাৎ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এর ওয়েব সাইটে ২১/০৩/২০২৪ খ্রি: তারিখে প্রকাশিত ’এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর ফরম পরণের বিজ্ঞপ্তি’ এর ২০ নং নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে ”শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমহ আগষ্ট/২০২৪ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টিউশন ফি আদায় করতে পারবে” কিন্তু কলেজ জানয়ারী/২০২৫ পর্যন্ত টিউশন ফি আদায় করে। যদিও শিক্ষার্থীদেরকে অতিক্তি ৫ মাসের টিউশন ফি আদায়ের বিনিময়ে কোন প্রকার ডকমেন্ট দেওয়া হয় নাই।
২। অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায় : ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে ২৪ মাসের বেতন আদায় করা হয়। অর্থাৎ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এর ওয়েব সাইটে ২১/০৩/২০২৪ খ্রি: তারিখে প্রকাশিত ’এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর ফরম পরণের বিজ্ঞপ্তি’ এর ২০ নং নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে ”শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমহ আগষ্ট/২০২৪ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টিউশন ফি আদায় করতে পারবে” কিন্তু কলেজ জানয়ারী/২০২৫ পর্যন্ত টিউশন ফি আদায় করে। যদিও শিক্ষার্থীদেরকে অতিক্তি ৫ মাসের টিউশন ফি আদায়ের বিনিময়ে কোন প্রকার ডকমেন্ট দেওয়া হয় নাই।
একইভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এর ওয়েব সাইটে ১৫/০৬/২০২৩ খ্রি: তারিখে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৩ এর ফরম পরণের বিজ্ঞপ্তি’ এর ২১ নং নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে ”শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টিউশন ফি আদায় করতে পারবে” কিন্তু কলেজ ফেব্রুয়ারী/২০২৪ পর্যন্ত টিউশন ফি আদায় করে। এক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদেরকে অতিক্তি ৫ মাসের টিউশন ফি আদায়ের বিনিময়ে কোন প্রকার ডকমেন্ট দেওয়া হয় নাই। ৩। MPO এর অর্থ আত্মসাৎ : বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এলাকাবাসি জানতে পারেন যে, কলেজটি MPO ভুক্ত হলে সকল শিক্ষক-কর্মচারীর নিকট হতে উৎসব বোনাসসহ পাচ মাসের সরকারি বেতন জনাব মো: আলমগীর হাসান চাদা হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু অর্থ দিতে অস্বীকতি জানালে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি থেকে বহিস্কারসহ অন্যান্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। ফলে নিরুপায় হয়ে সকল শিক্ষক-কর্মচারী উক্ত অর্থ কোনো প্রমাণপত্র ছাড়াই দিতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পত্র ২৭/০৮/২০২৪ তারিখে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ জমা দেন। ৪। নিয়োগ বাণিজ্য ও আত্মীয়করণ : অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান এমপিও ভক্তির পর অধ্যক্ষ আলমগীর হাসান তার স্ত্রী সোমা বেগমকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ ও এমপিওভক্ত করেন।
উল্লেখ্য, সোমা বেগম ১০/০২/২০১৪ সালে ডিগ্রীর (যদিও ডিগ্রীর জন্য জাতীয় বিম্ববিদ্যালয়ে অধিভক্ত হয় ২০২২-২৩ সেশনে) জন্য ইংরেজি বিষয়ে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে কলেজে যোগদান করেন এবং ২০১৯ সালের শেষের দিকে নন-ক্যাডারে প্রাইমারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। এবং কলেজে পদত্যাগ পত্র জমা না দিয়ে নতন কর্মস্থলে চলে যান। অধ্যক্ষ আলমগীর হাসান সোমা বেগমকে ২০১৪ সালের নিয়োগ দেখিয়ে এমপিওভুক্ত করেন যা চাকরির বিধিবিধানের পরিপন্থী। ৫। অশোভন আচরণ : শিক্ষক-কর্মচারিসহ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে অধ্যক্ষ আলমগীর হাসানের কথোপকথনে কখনই ভদ্রতা ও শালীনতাবোধ ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজসহ করুচিপর্ণ আচরন করেন। এ বিষয়ে গোপালদীবাসীসহ আড়াইহাজারের সকলেই অবগত। ৬। রশিদ ছাড়াই অর্থ আদায় : অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ হলো প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নবীন বরণ, বিদায় অনষ্ঠানের নামে রসিদ ছাড়াই টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করেন অধ্যক্ষ আলমগীর হাসান।
Tags: গোপালদী