বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি♦♦
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করা পঞ্চগড়ের মেয়ে ইয়ারজান বেগমের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ভাঙা কুঁড়ে ঘর থেকে ঈদ উপহার হিসেবে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পেয়েছেন দুই রুম বিশিষ্ট একটি ঘর।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ জুন) ইয়ারজানের বাবা-মায়ের হাতে ‘ইয়ারজান নীড়’ এর চাবি হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম। এ সময় স্থানীয়দের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয় ঈদের আগেই নতুন ঘর পেয়ে মহাখুশি ইয়ারজান।
সেরা গোলরক্ষক ইয়ারজান বলেন, ঈদের আগেই উপহার হিসেবে নতুন ঘর পেয়ে আজ আমি খুবই খুশি। এটি দারুণ উপহার। খুব আনন্দ লাগছে। ডিসি স্যার আমার আশা পূরণ করেছেন। আমার মা-বাবা একদিন পাকা ঘরে ঘুমাবেই, আমি এমনটাই স্বপ্ন দেখেছিলাম। সবাই দোয়া করবেন। আমি জেলা প্রশাসক স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
চাবি হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিনহাজুর রহমান, হাড়িভাসা ইউ’পি চেয়ারম্যান সাইয়েদ নুর-ই-আলম, ইউ’পি সদস্য জুলহাস উদ্দীন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান গণিসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা।
জানা যায়, গোলরক্ষক ইয়ারজানের জন্য সাড়ে ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেমি পাকা ঘর তৈরী করা হয়েছে। এতে ওয়াশরুম কাম টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মানসম্মতভাবে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের আগেই এমন উপহার পেয়ে উ”ছ¡সিত ইয়ারজান ও তার পরিবার।
উল্লেখ্য, চলতি সালের ৮ মার্চ নেপালের মাঠে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এই অর্জন সম্ভব হয় কেবল গোলরক্ষক ইয়ারজানের বীরত্বেই। টুর্ণামেন্টের সেরা গোলকিপারের ট্রফিটাও নিজের করে নেন ইয়ারজান।
এরপর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে উঠে আসে ইয়ারজানের পারিবারিক অবস্থা। গোলরক্ষক ইয়ারজানের মা রেনু বেগম একজন কৃষি শ্রমিক। অন্যের খেতে মজুরী খেটে চালাতেন সংসার। বাবা আব্দুর রাজ্জাকও অসু¯’ থাকায় কোনো কাজ করতে পারেন না। এমন পরি¯ি’তিতে মা রেনু বেগমের দিনমজুরীর টাকায় কোনোভাবে কষ্টে চলতো চারজনের সংসার। ঘরের অবস্থাও ছিলো জরাজীর্ণ। জীর্ণ কুটির থেকেই ইয়ারজানের সেরা গোলরক্ষক হয়ে ওঠার গল্পটি হৃদয় কাড়ে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের। তখনই ইয়ারজানের বাড়িতে ছুটে যান পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক। পারিবারিক অবস্থা দেখে ইয়ারজানের পরিবারের জন্য পাকা ল্যাট্রিনসহ দুই কক্ষের পাকা রুম করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এরপর প্রশাসনের উদ্যোগে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি সেমি পাকা ঘর ও প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়াশরুম, টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। অবশেষে ইয়ারজানকে নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তর করে দেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা চেয়েছি পঞ্চগড়ের কৃতি সন্তান ইয়ারজান ও তার পরিবার যেন সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারে। এজন্য দুই কক্ষের সেমি পাকা ঘর, ওয়াশরুম, টয়লেটসহ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন থেকে ইয়ারজান ও তার পরিবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। ইয়ারজান আরও এগিয়ে যাক, দেশের সুনাম অর্জন করুক এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।