ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরে ঘোড়াঘাট উপজেলায় ষাটোর্ধ্ব রাহেলা বেগমের জীবন কাটছে জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত সরকারি বিএস কোয়ার্টারে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া অসহায় রাহেলার জীবন সংগ্রামের শেষ কোথায়, কেউ জানে না!
জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর পূর্বে বৃদ্ধা রাহেলার প্রথম স্বামী চান মিয়া এক ছেলে সন্তান রেখে মারা যায়। পরবর্তীতে রাহেলার সাথে উপজেলার সাতপাড়া গ্রামের শুকরান আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামের বিয়ে হয়। এরপর দ্বিতীয় স্বামীর সংসারেও তার একটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়। রাহেলা তার বিয়ের ৩/৪ বছর পর ১ম পক্ষের ছেলে আব্দুর রহিমের বিয়ে দেয়। এক বছর পর রহিমও একটি পুত্র সন্তান লাভ করে। রহিমের ছেলের বয়স যখন ২ বছর তখন সেও মারা যায়। এ সময় রাহেলার ২য় স্বামীর পক্ষের সন্তান বাবলু মিয়ার বয়স ৬ বছর। বিয়ের ৬/৭ বছর সংসার করার পর স্ত্রী-সন্তানকে রেখে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজ বাড়ি থেকে নিরুদ্ধেশ হয় রাহেলার ২য় স্বামী শহিদুল। এ সময় ঘরে এক পুত্র ও এক নাতির ভরণপোষণের দায়িত্ব পড়ে যায় রাহেলার।
অসহায় রাহেলা জীবন-জীবিকার তাগিদে সাতপাড়া গ্রাম থেকে দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান ও ১ম পক্ষের মৃত সন্তানের ছেলে আমিরুল ইসলামকে নিয়ে উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজারে আসে। এসময় তার কোথাও থাকার ¯’ান না হওয়ায় রানীগঞ্জের দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামে অব¯ি’ত সিংড়া ইউনিয়নের পরিত্যক্ত বিএস কোয়ার্টারে আশ্রয় নেয়।
বৃদ্ধা রাহেলার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি একজন ভ‚মিহীন আমার জায়গা জমি না থাকায় কোয়ার্টারটি পরিত্যক্ত অব¯’ায় দেখে পরিস্কার করে বসবাস শুরু করি। প্রায় দেড় যুগ পার হয়ে গেছে, এখানে বসবাস করলেও জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঝড়বৃষ্টি হলেই ঘরবাড়ি নড়ে ওঠে। তখন জীবন বাঁচাতে কোয়ার্টার ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে হয়। ঝর বৃষ্টি থামলে আবার কোয়ার্টারে আসি। উপর থেকে চুয়ে চুয়ে পানি পরে এবং ছাদ ঢালাইয়ের সিমেন্টও খসে পড়ে। মনে হয় এই বুঝি ভেঙে পড়বে! বয়স্ক ভাতাও পাইনা। একটা ঘরের জন্য এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অনেকদিন ঘুরেছি কিš‘ কোন লাভ হয়নি। কিছুদিন পূর্বে ইউএনও স্যারের কাছে গিয়েছিলাম, তিনি আমাদের অব¯’া দেখে গেছেন। ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছেন। হোটেলে, মানুষের বাড়িতে কাজ করতে করতে আমার হাত পায়ে ঘা হয়ে গেছে। এখন কেউ আগের মত আর কাজ দিতে চায় না। এভাবেই টুকটাক কাজ করে, এখানে ওখানে চেয়ে খেয়ে বেঁচে আছি। এই বয়সে আর পারিনা, আমি বড়ই ক্লান্ত। আল্লাহ হয়তো এরকমটাই চেয়েছিলেন। ছেলেটি বৌ সন্তান নিয়ে ঢাকায় কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাঁর সংসারই ঠিক মতো চলে না, আমাকে দেখবে কেমনে? নাতিটা হোটেলে হোটেলে মেসিয়ারের কাজ করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে জানান, আমরা পরিত্যক্ত ভবনগুলো পরিদর্শন করেছি। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখানে বসবাসরত ভূমিহীনদের ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।