নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্রুনাইয়ে এমপি পরিচয়ে মানবপাচার করে ৩৩ কোটি টাকা আত্মসাত করেন আমিনুর রহমান হিমু নামের প্রতারক। অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন এনএসআই ও র্যাবের হাতে । তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এমপি পরিচয় দিয়ে ব্রুনাইয়ে মানবপাচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বুধবার দুপুরে হিমুকে (৫৫) রাজধানীর কাফরুল থেকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে এনএসআই ও র্যাব। সহযোগীরা হলেন মো. নুর আলম (৩৬) ও বাবলুর রহমান (৩০)। গ্রেপ্তারের সময় হিমুর দেহ তল্লাশি করে একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন পাওয়া যায়।
র্যাব জানায়, মানবপাচারকারী চক্র ব্রুনাইয়ে ৪০০ জনকে পাচার করেছে। এতে হিমু হাতিয়ে নিয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। ঋণ ও জমিজমা বিক্রি করে ব্রুনাইয়ে যাওয়ার টাকা দিয়েছিলেন ৬০ জন। কিন্তু সেখানে কোনো কাজ না পেয়ে তাঁদের মানবেতর জীবন-যাপন শুরু হয়। বাধ্য হয়ে নিজ খরচে দেশে ফিরতে হয় তাঁদের। পরে জানা যায়, ২০১৯ সালে ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের মূল হোতা মেহেদী হাসান বিজনের কম্পানির নামে ভুয়া ডিমান্ড লেটার সংগ্রহ করে ওই ৬০ জনকে ব্রুনাইয়ে পাঠিয়েছিল হিমু। তাঁর নিজের কোনো রিক্রুটিং লাইসেন্স নেই, সে নজরুল ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস ও হাইওয়ে ইন্টারন্যাশনাল আরএল ব্যবহার করে ব্রুনাইয়ে মানবপাচার করে।
আজ বিকেলে র্যাব-৩-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, ব্রুনাইতে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন। এসব শ্রমিকের একটি বড় অংশ মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে দেশটিতে গিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি মালিকানায় প্রায় তিন হাজার কম্পানি নিবন্ধিত আছে, যার অধিকাংশই নামসর্বস্ব। এসব কম্পানি বানোয়াট প্রকল্প দেখিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্রুনাই থেকে কর্মসংস্থান ভিসা নিয়ে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিক্রি করে। ব্রুনাইতে যাওয়ার জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও প্রায় তিন-চার লাখ টাকা ব্যয়ে একজন কর্মীকে ব্রুনাই যেতে হয়।
রাকিবুল হাসান বলেন, ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের ঘটনায় অসংখ্য ভুক্তভোগী র্যাব-৩ কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, দেশটিতে মানবপাচারের মূল হোতা মেহেদী হাসান বিজন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন অপুর অন্যতম সহযোগী হচ্ছে হিমু। তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন।
রাকিবুল হাসান জানান, আইন অনুসারে ব্রুনাইতে একজন কর্মী সর্বোচ্চ দুই বছর অবস্থান করতে পারেন। দুই বছরে অভিবাসন ব্যয়ের টাকা তুলতে না পেরে ভিসার মেয়াদ শেষ হলে কর্মীরা বাংলাদেশে না ফিরে মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে দুই হাজার ব্রুনাই ডলার দিয়ে পার্শ্ববর্তী প্রদেশ হয়ে মালয়েশিয়ায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কোনো ভিসা দেওয়া হয় না। ব্রুনাই বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানবপাচার কার্যক্রমের রুট এবং গন্তব্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও নির্যাতনসহ বহুমুখী অপরাধে বিজনসহ সাতজনের পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পাসপোর্ট অধিদপ্তর বিজনসহ সাতজনের পাসপোর্ট বাতিল করে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের শিকার ভুক্তভোগীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিজনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করে। তাঁর নামে দেশে ২০টি মামলা হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি দেশেই আত্মগোপনে আছেন।