স্টাফ রিপোর্টার:
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় স্কুল জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা সুভাষ চন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানাগেছে, উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব পশারিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীমা রাণী গোলদার তার স্ত্রী বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু তার স্বামী সুভাষ চন্দ্র হালদার প্রতারণা চক্রের মূলহোতা। স্থানীয় সূত্রমতে, তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ এবং জাল-জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি পিরোজপুর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে, সরকারী কর্মচারীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে স্পেশাল দুর্নীতি দমন আইনে মামলা দায়ের করেন বাদী আরিফ বিল্লাহ।
মামলা সূত্রে জানাগেছে, ১৬৫নং দক্ষিণ পূর্ব পশারিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীমা রানী গোলদার তার স্বামী প্রতারক সুভাষ চন্দ্র । বিদ্যালয়ের কাগজ পত্রে প্রতিষ্ঠতা সভাপতি আব্দুস্ ছালাম মিয়া নামের স¦াক্ষর জালিয়াতি করে, বিভিন্ন ফান্ডের সরকারী অর্থ ও স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বিদ্যালয়ের নামে প্রতিষ্ঠতার নামীয় নিজ ভূমিতে স্কুল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণাধিন প্রতিষ্ঠানের ভূমির মূল দলিল পত্র এখনো প্রদান করা হয়নি। তথাপি প্রতারক চক্র সুভাষ ভান্ডারিয়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হতে ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর একটি জাল দলিল তৈরী করে স্কুলের নামে প্রদান করেন। প্রকৃত পক্ষে ওই বিদ্যালয়ের নামে কোন জমি নাই এখন পর্যন্ত। সকল প্রকারই ভূয়ারুপে চলমান রয়েছে। প্রকৃত মালিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল ছালম হাওলাদার এবং তার স্ত্রী শিল্পী বেগম। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ থেকে শুরু করে বিদ্যালয় জাতীয়করণ পর্যন্ত তাঁদের অনেক অবদান রয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কাগজ-পত্র জালিয়াতি করেন সুভাষ।
আরও জানাগছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীমা রাণী গোলদার মঠবাড়ীয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং মূল প্রতারক চক্র সুভাষ চন্দ্র হালদার(৫৫) পিতা মৃত ললিত হালদার, সাং পশারীবুনিয়া, থানা ভান্ডারিয়া, জেলা পিরোজপুর। প্রতারক সুভাষ ১৯৯৫ সালে ১৮ জুলাই অবৈধভাবে ওই বিদ্যালয়ে নিয়োগ গ্রহণ করেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে, পরবর্তী সময়ে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে আবেদন করেন। তবে বিদ্যালয়ে রেকর্ড পত্রে দেখা যায় প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ এবং যোগদান একই তারিখে। নিয়োগের ১০ বছর পর ২০০৫ সালে স্থানীয় সুভাষ হালদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরবর্তীতে ভান্ডারিয়া উপজেলায় ভোটার হয়ে বিদ্যালয়ের কাগজপত্রে পিতার নামের স্থলে স্বামীর নাম ব্যবহার করেন, যা সম্পূর্ন অবৈধ।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুস্ ছালাম মিয়া জানান, আমার নিজের ক্রয় করা সম্পত্তিতে, আমি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করি। তাই আমি শাররিক ভাবে ভালো না থাকার কারণে। আমার বিশ্বাস সূত্রে অসম্পূর্ণ কাজ-সম্পূর্ণ করার লক্ষে সুভাসকে কাগজ বুঝিয়ে দেই। তিনি স্কুল জাতীয়করন হতে না হতেই, আমাকে কোন কাজে রাখেন না। এবং আমার কাগজ পত্রাদি বুঝিয়ে দিতে বললেও, তিনি নানা ভাবে তালবাহানা করেন। সুতরাং অবশেষে আমরা জানতে পারলাম স্কুলে সকল প্রকার সরকারী বরাদ্ধ সর্বপ্রকার লুটপাট করেন। আমার অগচরে আমার নিজ স্বাক্ষর জালিয়াতি করেন তিনি অনেক ধরনের প্রতারণা সুষ্টি করেছেন। অভিযুক্ত জালিয়াতি চক্র সুভাষকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিযোগ্য প্রদান করতে হবে। কারণ তিনি আমার স্ব-চোঁখে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমি যে প্রতিষ্ঠান ১৬৫নং করেছি সেই প্রতিষ্ঠান তিনি কখনও ১৬৪ কখনও ১৬৫ ব্যানারে প্রদান করেন। সে ক্ষেত্রে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও নজরধারী হওয়া দরকার।
মামলার বাদী আরিফ বিল্লাহ জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ছবি সঠিকভাবে বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ না করে। দায়সারা ভাবে আঠা দিয়ে বিদ্যালয়ের টিনের বেড়ায় লাগিয়েছেন তিনি। অভিভাবকগণ অনতিবিলম্বে উক্ত দুর্নীতিগ্রস্থ প্রধান শিক্ষককে অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।
আরও জানান, আমার বাবা আব্দুস্ ছালাম মিয়া অনেক ধার্মীক ও সমাজ প্রিয় মানুষ। বাবা মানুষের সেবা বা কল্যাণে সর্ব সময়ে নিয়োজিত থাকেন। তিনি মানুষকে বেশি ভালো বাসেন, সে ভালোবাসার পরিনাম ফল-বাবাকে উপহার দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাবার স্কুল করার পিছনে শত পরিশ্রম এবং লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বাবা অসম্পূর্ণ কাজ গুলো, সম্পূর্ণ করার লক্ষে সুভাষকে কাগজ বুঝিয়ে দিলে । এক পর্যায় স্কুল জাতীয়করন হলে, স্কুলের কাগজ বুঝিয়ে দিতে নানা প্রকার তালবাহানা শুরু করে যাচ্ছেন। তাই কাগজ বুঝিয়ে দিতে সক্ষাম না হলে, আমাদের কাছে বিষয়টি সন্দেহ জাগে। তাই আমরা বিষয়টি সরকারী দপ্তরে ক্ষতিয়ে দেখলে, সেখানে সরকারী কর্মচারীরাও আতঙ্ক শুরু করেন। এক পর্যায় সম্পূর্ণ বিষয় ক্ষতিয়ে দেখার পর, সরকারী কর্মচারীদেরও দুর্নীতির মূখশ চিত্র ফাঁস হয়ে গেলো।
তিনি বলেন, সুভাষ আমার বাবার স্বাক্ষর জ্বালিয়াতি করে, যত প্রকার সরকারী বরাদ্ধ ছিলো, সকল অর্থ সরকারী দপ্তরের কর্মচারীদের ভাগ বাটোয়ারা দিয়ে। তিনি নিজে সকল অর্থ আত্মসাত করার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এমন কি বিষয়ে ভান্ডারিয়ার থানার শিক্ষা অফিসার পরিদর্শন করে দেখেন। স্কুলে কোন ছাত্র-ছাত্রীও নেই। কাগজে-কলমে দেখিয়েছে ২০০/২৫০ শিক্ষার্থী কিন্তু আসলে কোন শিক্ষার্থী নেই। এমকি আমাদের স্কুলের নামে যে ভূমির দলিল পত্র জমা দেওয়া ছিলো, তা সুভাস বাতিল করে, ভুয়া ভূমির দলিল বানিয়ে প্রদান করেন তিনি। এমন ধরনের সত্যতা খুঁজে বেড় করি আমি। যার কারণে তার সু² জ্বালিয়াতি প্রমান হওয়াতে, বাবাকে বললাম, বাবা আর আমাদের স্কুল প্রয়োজন নেই বরং জ্বালিয়াতিবাজদের কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। যার কারণে আমি নিজে বাদী হয়ে পিরোজপুর জেলার বিজ্ঞ আদালতে স্পেশাল পিটিশন মামলা দায়ের করি। কেইস নং ২/২০২০ ধারা ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন আইনের ৫(২)৫(৩)সহ ১৬২/১৬৩/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ দন্ডবিধি ধারা মতে।
ভান্ডারিয়া থানার ওসি বলেন, আমার কিছু করার নেই। তবে পরবর্তীতে কিছু না হয়। সে বিষয়ে আমি সাংবাদিককে দেখবো। এমন ধরনের কথাবার্তা বলেন তিনি।
থানার শিক্ষা অফিসার বলেন, আমি ১৬৫নং দক্ষিণ পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। যার সম্পূর্ণ সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলে। সাতজন বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। সুষ্ঠভাবে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বলে জানান। তিনি আরও বলেন, আমি ঘুষ বাণিজ্য পছন্দ করি না। এবং যে ঘুষের কথা বলে তাকে আমি নিন্দা চোঁখে দেখি। তবে কোন প্রকার দল-মতের চাপ সৃষ্টি না থাকলে । বিষয়টি সু²ভাবে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো জানান তিনি।