নিজস্ব প্রতিবেদক:
পানগাঁও কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার লুৎফুল কবিরের বিরুদ্ধে অধীনস্থ এক রাজস্ব কর্মকর্তাকে মারধর, হেনস্তা ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে নোট শিট ছিঁড়ে ফেলা, ফাইল ছুড়ে মারা ও কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে পানগাঁও কাস্টম হাউসে এ ঘটনা ঘটে। আজ রবিবার পানগাঁও কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার লুৎফুলকে অপসারণের আনন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের দাবী। এর আগেও লুৎফুল কবিরের বিরুদ্ধে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হেনস্তা, লাঞ্ছিত ও অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। তাই অবিলম্বে লুৎফুলরের শাস্তির জন্য জোর দাবি জানান তারা।
বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ২৮তম ব্যাচের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পানগাঁও কাস্টমস কমিশনার, এনবিআর সদস্য ও এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এ কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘যুগ্ম কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) লুৎফুল কবির পানগাঁও কাস্টম হাউসে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ করে আসছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সম্প্রতি হাউসের নামাজের কক্ষ বন্ধ করে দেন। নামাজ আদায়কারীদের নাস্তিক সম্বোধন করাসহ আপত্তিকর ভাষায় গালাগাল করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে গুম এবং বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে হয়রানি করার হুমকি দিয়েছেন।’
ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘২৫ নভেম্বর বুধবার বেলা ২টায় হাউসের শুল্কায়ন গ্রুপ-৪ এবং কায়িক পরীক্ষণ গ্রুপ-৩-এর সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের ডেকে তার কক্ষে নিয়ে একটি নথিতে রাজস্ব কর্মকর্তা ভবেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে দিয়ে জোর করে সই নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভবেশ চন্দ্র বিশ্বাস সই করতে অপারগতা প্রকাশ করলে যুগ্ম কমিশনার প্রথমে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে ওই রাজস্ব কর্মকর্তাকে মারধর করেন, যা শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ ও সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
অভিযোগে বলা হয়, ‘এর আগে যুগ্ম কমিশনার হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল্লা আল মাহমুদ, কাজী হাবিবুর রহমান, আব্দুর রউফ খান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা একেএম আওলাদ হোসেন, সৈয়দ আরিফুর রহমান, মিজানুর রহমান, হেলাল আকন, আব্দুল আলীম, পীযূষ কুমার বিশ্বাস, আব্দুর রহমান জোয়ার্দার, মোস্তফা কাওছার, সমীর কান্ত মজুমদারসহ অন্তত ৪১ রাজস্ব কর্মকর্তা-সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে গালাগাল, আপত্তিকর আচরণ ও হেনস্তা করেছেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন সময় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও একই আচরণ করেছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।’
অভিযোগ করা হয়, ‘যুগ্ম কমিশনার এর আগে চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশে রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা নিতে হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে জোর করে নানা ধরনের অনিয়ম করানোর চেষ্টা করেছেন। ব্যর্থ হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তার এমন আচরণ ও রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টির অপচেষ্টা হাউসের রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে, যা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিরাট হুমকি। এ কর্মকর্তার এমন আচরণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অনতিবিলম্বে এ কর্মকর্তাকে অপসারণ এবং সুষ্ঠ ও ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে কোনোভাবেই কাজে মনোনিবেশ করা সম্ভব নয়। আইন ও বিধি অনুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।’
পানগাঁও কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, লুৎফুল কবির রাজস্ব কর্মকর্তা ভবেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে তার কক্ষে ডেকে একটি চিঠি তৈরি করতে বলেন। চিঠি তৈরি করে সই ছাড়াই নিয়ে গেলে তিনি তা ছিঁড়ে ফেলেন। কর্মকর্তাকে ফাইল ছুড়ে মারেন, গালাগাল করেন এবং থাপ্পড় দেন। রাজস্ব কর্মকর্তা কাঁদতে কাঁদতে লুৎফুল কবিরের রুম থেকে বের হন। খবর পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যুগ্ম কমিশনারকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে কমিশনারের আশ্বাসে তিনি মুক্তি পান।
উল্লেখ্য যে, অভিযুক্ত যুগ্ম কমিশনার লুৎফুল কবির ইতোপূর্বে যেসব কর্মস্থলে কর্মরত ছিলেন সেখানেও অনুরুপ ঘটনা ঘটিয়েছেন এবং নানাবিধ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি বলেই অভিযুক্ত কর্মকর্তা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ কাস্টমস এন্ড ভ্যাট অফিসার্স এসোসিয়েশন (বাকাএভ) ও আঞ্চলিক সংগঠন (ঢাকাএভ,চকাএভ,খুকাএভ) এর নেতৃবৃন্দসহ মাঠপর্যায়ের সকল কর্মকর্তা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি অনতিবিলম্বে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে অপসারণ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে রোববারের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে সব কাস্টম হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পানগাঁও কাস্টম হাউস কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো যাবে।
এ বিষয়ে যুগ্ম কমিশনার লুৎফুল কবিরকে একাধিকবার ফোন (01715-366901) করলে তিনি কোন সাড়া দেননি।