নিজস্ব প্রতিবেদক:
* আগস্ট পর্যন্ত যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আটকে ছিল, সেগুলোতেই সুযোগ
* সবার জন্য চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি উঠেছে।
* ২৫ মার্চ বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হলে আবেদনের সুযোগ পাবেন
করোনাভাইরাসের কারণে সিদ্ধান্ত হয়েও আটকে থাকা সরকারি নিয়োগে প্রার্থীদের বয়সসীমায় ছাড় দেওয়া হবে। তবে বিসিএসের বেলায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। নতুন সিদ্ধান্ত হলো যেসব মন্ত্রণালয় বা অধীন প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিয়োগে ২৫ মার্চের আগে নিয়োগের জন্য ছাড়পত্রসহ প্রস্তুতি নিয়েও করোনার কারণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, এখন সেসব বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৫ মার্চ নির্ধারণ করতে বলেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক পত্রে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এটি করতে বলা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশে সাধারণত সরকার বয়সসীমা ৩০ বছর। এখন যাদের বয়স গত ২৫ মার্চ ৩০ বছর হয়ে গেছে, তাঁরাও উল্লেখিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন।
কোভিড-১৯-এর কারণে দেশের প্রায় সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। মানুষের আয় কমে গেছে, বেড়েছে বেকারত্ব। নিয়োগ আটকে গিয়ে চাকরির বাজারও সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তরুণদের কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর দিল সরকার। করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরি-প্রার্থীদের বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। কারণ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বেশ কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আটকে গিয়েছিল। এ কারণে অনেক তরুণ আবেদন করতে পারেননি। এ জন্য যাঁদের বয়স ২৫ মার্চ ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাঁদেরও আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন
গত ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাঁরাও বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন। অবশ্য এই সুযোগ লম্বা সময়ের জন্য নয়। মূলত গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত আটকে থাকা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা এ সুযোগ পাবেন। আটকে থাকা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো এখন দেওয়া হচ্ছে। সেখানেই বয়সের এই বিষয়টি বলে দেওয়া হবে। তবে নিয়মিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মেই সবকিছু চলবে। কারণ, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি এখন পর্যন্ত আটকে যায়নি। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বরে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়ে থাকে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়ে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। কারণ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বেশ কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আটকে গিয়েছিল। এ কারণে অনেক তরুণ আবেদন করতে পারেননি। এ জন্য যাঁদের বয়স ২৫ মার্চ ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাঁদেরও আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। স্থবির হয়ে পড়ে প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। কাজ হারায় অসংখ্য মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় নতুন নিয়োগও। আটকে যায় বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। এ সময়ে বাংলাদেশে বেকারত্বও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব দ্বিগুণ হয়েছে। করোনার আগে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে গড়ে ১২ জন বেকার ছিলেন। এখন তা বেড়ে প্রায় ২৫ জন হয়েছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হওয়ায় দীর্ঘদিন পর এখন কিছু কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া শুরু হয়েছে। গত জুনে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। কিন্তু সেখানে বয়সের সর্বোচ্চ সীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করে দেওয়া আছে গত ১ জুন পর্যন্ত। ফলে তরুণদের একটি অংশ নিয়োগে অংশ নিতে পারবে না। এতে তরুণদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। এ জন্যই সবার জন্য চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. ইসরাফিল এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ মার্চ যাঁদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাঁদের আবেদনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক। তবে করোনার কারণে যাঁদের স্নাতক পরীক্ষা আটকে গেল, তাঁদেরও এমন কিছু সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না হলে এত দিনে তাঁদেরও স্নাতক শেষ হতো এবং চাকরির আবেদনের সুযোগ পেতেন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, প্রথমত সেশনজটের কারণে অনেকের স্নাতক শেষ না হওয়ায় চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন না। কিন্তু বয়স বাড়ছে। এর মধ্যে আবার পাস করলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না থাকার কারণেও আবেদন করতে পারছেন না। এ অবস্থায় আরও কিছু করা দরকার। কেউ কেউ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী সাধারণভাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। চাকরিতে প্রবেশের এই সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩২ করার দাবি উঠেছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন চলছে। তবে সরকার তাতে সায় দেয়নি। এ অবস্থায় সরকার বয়সে কিছুটা ছাড় দিল।
জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সরকার আপাতত যেটি করেছে, সেটিই ঠিক আছে বলে তিনি মনে করেন।
[সূত্র-প্রথম আলো]