সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলী নয়াপাড়া নাভানা সিটির উত্তর পাশে একটি বিরোধপূর্ণ জমিতে বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে স্থাণীয় কাউন্সিলর আলী হোসেন আলা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্র দলের আহ্বায়ক রাকিবুর রহমান সাগর গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। বর্তমানে এলাকায় থমতমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আহতরা হলো, নাসিক ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গ্রুপের হারুনুর রশিদ মোল্লা (৪৫), আ: জলিল হাওলাদার (৪২), নুরুল ইসলাম প্রধান (৩২), মোতালেব হোসেন বিদ্যুৎ (৫৫), জাহাঙ্গীর খান (৩৫), রাজন মিয়া (৩৫), তুহিন (২৮), লিমন শেখ (৪০) সহ আরো ৭/৮ জন এবং ছাত্রদল আহ্বায়ক রাকিবুর রহমান সাগর গ্রুপের রাকিবুর রহমান সাগর (২৯), মানিক মিয়া (৩৫) ও কামাল (৩০) সহ ৭/৮ জন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্র দলের আহ্বায়ক রাকিবুর রহমান সাগরের মা রেজিয়া বেগম জানায়, আমার স্বামী মৃত আবুল কাশেম ১৯৯৪ সালে এবং ১৯৯৯ সালে দুইটি দলিলে ওমেদ আলীর ওয়ারিশগণের কাছ থেকে ১৯ শতাংশ জমি সাফ কবলা দলিল মূলে ক্রয় করে নামজারী জমাভাগ সম্পন্ন করে ভোগ দখল করে আসছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০৪ সালে বিবাদী নুর মোহাম্মদ গং আমাদের নামজারী বাতিল করে তাদের নামে নামজারী করে নেয়। পরে একই বছরের মার্চের ২৮ তারিখ আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর পরবর্তীতে আমরা বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আদালতে শরনাপন্ন হই এবং ২০১১ সালে আদালত আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তখন থেকে জমিটি এভাবেই পরে ছিল। কিন্তু গত শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জানতে পারি যে আমাদের জমিতে নাসিক ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী হোসেন আলা ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করছে। তখন আমরা থানায় গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে থানা থেকে এসআই সাদ্দামের নেতৃত্বে পুলিশ পাঠায়। কিন্তু পুলিশ আসছে খবর পেয়ে কাউন্সিলরের লোকজন চলে যাওয়ায় কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো জানায়, আজ সকালে আবারো কাউন্সিলরের নেতৃত্বে তার লোকজন ওই জমিতে বালু ভরাট করছে শুনে আমার ছেলে রাকিবুর রহমান সাগর এবং আমাদের আত্মীয় স্বজনসহ কয়েকজন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপর আক্রমন চালানো হয়। এতে আমার ছেলে সাগর ও আমাদের আত্মীয় মানিক ও কামাল সহ আরো ৭/৮ জন গুরুতর আহত হয়। বর্তমানে তারা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এব্যাপারে নাসিক ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী হোসেন আলা জানায়, আমি মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী করি না তাই আমার এলাকার মানুষ আমাকে টাকা ছাড়া কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছে। আমি দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় জমির ব্যবসা করি কিন্তু কোন ওয়ারিশের জমি কিনি না। যদি ভেজাল মুক্ত জমি পাই তাহলে তা ক্রয় করে বিক্রি করি। আমার বাপ-দাদার অনেক সম্পত্তি রয়েছে তাই কারো সম্পত্তি জোর করে দখল করিনা। জমি দখল হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আদমজী সোনামিয়া বাজারের মুদি ব্যবসায়ী হাজী রমজান মাহাজন ও এসও রোড এলাকার হাজী রুহুল আমিনের কাছ থেকে ৬/৭ বছর আগে ১৯ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রি বায়না সূত্রে ক্রয় করি এবং ওই জমির পাশে আরো ৭ বিঘা জমি ক্রয় করি। বর্তমানে ওই ৭ বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছি কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ১৯ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রি করে নিয়ে তাদেরকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তখন আমি তাদেরকে বলি জায়গা বুঝিয়ে দেন আমি বালু ভরাট করব। তাই গত শনিবার আমি ওই জমিতে বালু ভরাট করার জন্য ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলার ব্যবস্থা করি। ওইদিন খবর পেয়ে রেজিয়া বেগমের ছেলে সাগর ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁধা প্রদান করলে তাদেরকে কাগজ নিয়ে বসার জন্য বলি। কিন্তু আজ যখন বালু ভরাটের কাজ চলছে তখন সাগরের নেতৃত্বে বিদেশী পিস্তল, দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটাসহ ২/৩ শ লোকজন নিয়ে আমার লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমার অন্তত ১৫ জন লোক আহত হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: কামরুল ফারুক জানায়, শুনেছি বিরোধপূর্ণ একটি জমি দখল করতে গেলে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।