শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী সোমেশ্বরী ও কর্ণঝোড়া নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে।
স্থানীয় বালু দস্যুরা শ্রীবরদী উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর বালিজুরি, হালুয়াহাটি,খাড়ামুড়া, রাঙ্গাজান, তাওয়াকোচা কর্ণঝোড়া নদীর হাড়িয়াকোনা,মেঘাদল, কর্ণঝোড়া, বাবলাকোনা এলাকায় শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে।
বেপরোয়া ভাবে বালু লুট পাটের কারণে
উল্লেখিত এলাকাগুলোতে নদীপাড়ের বসতবাড়ি এ, আশপাশের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,সেতুটি ও রাস্তাঘাট হুমকির সম্মুখীন হয়ে পরছে। দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন।
বালিজুরি গ্রামের আব্দর রহিম, খাড়ামুড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম, তাওয়াকোচা গ্রামের ইউপি সদস্য রহমত আলী, খায়রুল ইসলাম, মহসিন আলী, , বাবলাকোনা গ্রামের ইউপি সদস্য আফির উদ্দিন, মেঘনাদলে তোফাজ্জল হোসেনসহ আরো অনেকেই জানান বালু দস্যুরা
দিনেরাতে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছেন। তাদের অভিযোগ দিনে রাতে এসব এলাকা থেকে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করা হচ্ছে।
বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পান না। আবার কেউ মুখ খুললে তাদের বিরুদ্ধে করা হয় মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ।
জানা গেছে, কর্নঝোড়া নদীর বালু লুটপাট নিয়ন্ত্রণ করেন সিংগাবরুনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল মিয়ার নেতৃত্বে বালুদস্যু মাসদ, মানিক মিয়া, ইয়াসিন, আব্দুস সালাম, সালমান, রহমান আলী বিডিআরসহ ১৫/২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট এ বালু লুটপাটের সাথে জড়িত। তবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন তিনি একসময় বালু ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন এখন তিনি বালু ব্যবসার সাথে নেই।
তিনি বলেন অন্যান্যরা এখনও বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত আছেন। আর সোমেশ্বরি নদীর বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করছেন তাওয়াকোচা বালু মহালের ইজারাদার শামীম আহম্মেদ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাওয়াকোচা বালু মহালের ইজারাদার শামীম আহমেদ ৭ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা নিয়ে তার বালু মহালের চালান বইয়ের একটি সিলিপ দিয়ে অবৈধ বালুর বৈধতা দিচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিট্রাক বালু ৩৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে অবৈধভাবে ১০০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে। উপজেলার সর্বত্র হাট বাজার গ্রামেগঞ্জে পাড়া মহল্লায় রাস্তার আশেপাশে বালুরহাটে পরিণত হয়েছে। স্তপ করে দেখা হয়েছে বালু।
এতে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এভাবে প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু । শুধু তাই নয় নদীর আশাপাশের এলাকায় বনের জমিতে গভীর গর্ত করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।
পাড় কেটে অবাধে বালু লুটপাটের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে । অপরদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে।
অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কারনে নদীর দু’পাশের রাস্তাগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে ।
বর্তমানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু বন্ধের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভাঙচুর করা হচ্ছে বালুর উত্তোলন যন্ত্র। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে করা হচ্ছে বালু উত্তোলনকারী শ্রমিকদের জরিমান।
কিন্তু অবৈধভাবে উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ শ্রমিকদের বালু উত্তোলন যন্ত্র ভাঙচুর ও জরিমানা করা হচ্ছে। এতে গডফাদাররা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।
একদিকে চালানো হচ্ছে অভিযান। অপরদিকে বালু লুটপাট। তাওয়াকোচা বালু মহালের ইজারাদার শামীম আহমেদ বলেন আমি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে কোন চাঁদা আদায় করি না।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাবেদ আহমেদ বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি বলেন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা পলিসি পরিবর্তন করে করেছে।
তারা আগে দিনের বেলায় বালু উত্তোলন করতো। এখন রাতের অন্ধকারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে অভিযান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন এরপরেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।