কুদ্দুস বিশ্বাস, আঞ্চলিক প্রতিনিধি(কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জেসমিন আখতার কর্মস্থলে না থেকে ঢাকায় বসে মোবাইল ফোনে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা-ও আবার একদিন দুই দিন নয়। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ওই কর্মকর্তা তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত। অবাক করা বিষয় হচ্ছে- ওই কর্মকর্তা একদিনের জন্যও নিজের কর্মস্থলে রাজীবপুরে আসেননি। ঘটনাটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব চিত্র। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অধিদপ্তরের ওপরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দিনের পর দিন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। আজ রবিবার সরেজমিনে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরে খোঁজখবর নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই দিন রাজীবপুর উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরের দরজায় তালা লাগানো থাকলেও জানালা খোলা পাওয়া গেছে। অফিসে অফিস সহকারী ও সহকারী পরিদর্শক- কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) রেজাউল করিমের দেখা পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ম্যাডাম ঢাকায় থাকেন। তিনি অফিসে আসেন না। কর্মরত অফিস সহকারী ও সহকারী পরিদর্শক দুজন মাসে একবার করে অফিসে আসেন। খালি আমি অফিসের দরজা খুলি আর বন্ধ করি।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেসমিন আখতার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে গত ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে যোগদান করেন। জেলা সমবায় অফিসে যোগদান করেই তিনি ঢাকায় ফিরে যান যা দীর্ঘ সময়েও একদিনেরও জন্যও তার কর্মস্থল রাজীবপুরে আসেননি। তবে প্রতিমাসের সরকারি বেতনভাতা ও আনুসাঙ্গিক খরচের বিল ঠিকই ভোগ করছেন তিনি। কার্যালয়ের অফিস সহকারী জামিউল ইসলাম বেতনভাতা তুলে ওই কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেন। অফিসের কাগজপত্রে ও বেতনভাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলে ওই সব কাগজপত্র কুরিয়ারের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয় বলেও জানিয়েছেন অফিস সহকারী জামিউল ইসলাম।
এদিকে অফিসের কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকার কারণে কার্যালয়ের অফিস সহকারী ও সহকারী পরিদর্শক পদে কর্মরতরাও তাদের স্যারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। তবে এ দুজন মাসে একবার করে অফিসে আসেন বেতনভাতা নেওয়ার জন্য। কার্যালয়ের একমাত্র সঙ্গী অফিস সহায়ক রেজাউল করিম। তিনি সকাল ১০টার দিকে অফিসের জানালা খুলে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে যান আবার বিকালে তা বন্ধ করেন। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চরম উদাসীনতা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সরকারি যে সেবা পৌঁছে দেওয়ার কথা তার ছিটেফোঁটাও পায় না উপজেলাবাসী। কর্মকর্তার অনুপস্থিতির কারণে সমবায় অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে।
অধিদপ্তরের এক কর্মচারী বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক নেতা ম্যাডামের আত্মীয়। এর প্রভাব বিস্তার করেন সমবায় অধিদপ্তরে। ফলে ওপরের কর্মকর্তারাও কেউ কিছু বলেন না, দেখেনও না। ৫ বছরের মধ্যে একদিনও কর্মস্থলে আসেননি, তারপরও কিছুই হয় না। সরকারি বেতনভাতা নিয়মিতই তুলছেন। শুনেছি ম্যাডামের স্বামী গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়ের বড় কর্মকর্তা। ঢাকায় বাড়ি আছে কয়েকটা। অর্থের কোনো অভাব নাই। মোবাইল ফোনে আমাদের নির্দেশনা দেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীরুল ইসলাম জানান, আমি যোগদানের চার মাসের মধ্যে একদিনও দেখতে পাইনি। উপজেলা মাসিক সভায়ও অনুপস্থিত। বিষয়টি জানতে পেরে আমি জেলা সমবায় অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। সরকারি চাকরি করে বছরের পর বছরের অফিস ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জেসমিন আখতার বলেন, আমি রাজীবপুরের কর্মকর্তা ঠিকই কিন্তু ডেপুটিশনে (প্রেষণে) ঢাকায় আছি। তা ছাড়া আমি তো সব সময় খোঁজখবর নিয়ে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তবে জেলা সমবায় কর্মকর্তা তাঁর ‘প্রেষণে’ থাকার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন এমনটি হতে পারে না। কিভাবে রাজীবপুর অফিসের কার্যক্রম চলে? আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
[সূত্র-কালের কন্ঠ]