আজ (১৫ মার্চ) বুধবার দুপুরে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেন। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইদুজ্জামান শিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাবু, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মানিক, সৈয়দপুর জেলা শাখার সহ—সভাপতি মাহফুজ হোসেন, প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম লোধী, জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মোঃ মাসুদ, কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম কনক, লালমনিরহাট জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক প্রশান্ত হাওলাদার শ্যামল, চট্টগ্রাম জেলার সদস্য সঞ্জয় কুমার লোধ, মোঃ জামাল উদ্দিন, মোঃ মহিন উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ১১/০৫/২০১৯ইং তারিখে সরকারি ছুটির দিনে ৮৬৫ জন খালাসীর এবং ০২/০৬/২০১৯ইং তারিখে ১১১৩ জন ওয়েম্যানের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। অতীব দুঃখের বিষয় প্রকাশিত ফলাফলে ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে এবং নিয়োগ বিধি না মেনে পোষ্যদের জন্য সংরক্ষিত কোটা সংরক্ষণ না করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনুসন্ধানী সংবাদে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে ফলাফল ঘোষণা করায় অনেকের চাকুরীর বয়সসীমা পেরিয়ে গেছে। নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় এবং ব্যাপক অনিয়মের কারণে খালাসী ও ওয়েম্যান অনেক পদ এখনো শূন্য রয়েছে। অধিকার বঞ্চিত আন্দোলনরত রেলওয়ে পোষ্যদের অনুমোদিত তালিকায় নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংগঠনটি জানায়, নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও রেলওয়ের পোষ্য এবং শ্রমিক—কর্মচারীদের অধিকার বঞ্চিত করার এক ঐতিহাসিক দলিল। বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটিসহ অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়নের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ সালে নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সংশোধনে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ১৪ মাসেও সেই কমিটি নিয়োগ বিধি সংশোধন করে নাই। উল্টো ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ বিধিমালা দ্বারাই একের পর এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও জনবল নিয়োগ করছে। এতে করে রেলওয়ে পোষ্যরা তাদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা চক্র আপনার সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করার এবং রেলওয়ের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও পোষ্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী কোন চক্র এই নিয়োগবিধি সংশোধন করছে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির ৮ দফা দাবি নিম্নরূপ:
১. ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঘোষিত ৮৬৫ জন খালাসী ও ১১১৩ জন ওয়েম্যানের ফলাফল থেকে অধিকার বঞ্চিত আন্দোলনরত রেলওয়ে পোষ্যদের অনুমোদিত তালিকায় নিয়োগ প্রদান এবং পোষ্যদের অধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটিকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অন্তভুর্ক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
২. ত্রুটিপূর্ণ “নিয়োগ বিধিমালা—২০২০” সংশোধনপূর্বক রেলওয়ে কর্মচারীবান্ধব নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন ও প্রতিটি রেল কর্মচারীর পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন পোষ্য’র চাকুরি নিশ্চিতকরণ এবং নিয়োগবিধি ১৯৮৫ অনুযায়ী জারিকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়োগ সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।
৩. প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের স্থায়ীকরণঃ রেলওয়েতে সকল প্রকার আউটসোর্সিং এর নামে পকেটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে জনবল সংকট সমাধানে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির মাধ্যমে সকল জেলা থেকে অসহায়—দরিদ্র রেলওয়ে পোষ্যদের টিএলআর/অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে জনবল সংকট সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি।
৪. রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও রেলওয়ে পোষ্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রেলওয়ের ভূমি লীজ প্রদান প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করে অব্যবহৃত ভূমি রেলওয়ে পোষ্য সুপার মার্কেট, বনায়ন, মৎস্য, কৃষি ও গবাদিপশু পালন প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে পোষ্যদের বেকারত্বের অভিশাপ হতে মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ন্যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটিকে ভূমি লীজ প্রদান ও রেলওয়ের ভূমিতে পিপিপি’র আওতায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ভূমি লীজ দেওয়া হচ্ছে, সে সকল প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেলওয়ে পোষ্যদের নিয়োগের বিষয়টি চুক্তিপত্রে উল্লেখ করার দাবি জানাচ্ছি।
৫. অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীদের ফাইনাল সেটেলমেন্ট এর কাজ সরকার নির্ধারিত দুই মাস সময়ের মধ্যে দ্রুত নিষ্পত্তি করণ ও কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক—কর্মচারীর পোষ্যদের যোগ্যতানুযায়ী দ্রুততার সহিত নিয়োগ সম্পন্নকরণ এবং যে সকল পোষ্যদের নিয়োগ দীর্ঘদিন থেকে অকারণে আটকে আছে, তাদের নিয়োগ সম্পন্ন এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ এর স্থলে ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।
৬. নিয়োগ, ক্রয়, ঠিকাদারী কাজ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিসহ সকল প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম কতৃর্ক দ্রুততম সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. রেলওয়ে শ্রমিক—কর্মচারী ও পোষ্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে রেলওয়ে হাসপাতাল সমূহে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ—সুবিধা নিশ্চিতকরণ, রেলওয়ের শ্রমিক—কর্মচারীর সন্তানদের স্বল্প ব্যয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির অধীনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় রেলওয়ে পোষ্য ইন্টারন্যাশনাল—স্কুল—কলেজ—বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় অব্যবহৃত রেল ভূমি লীজ প্রদান এবং অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত শ্রমিক—কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ১০ শতাংশ করে পরিত্যক্ত রেল ভূমি লীজের মাধ্যমে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি, এ ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলওয়ের মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।