মোঃ শিফাত মাহমুদ ফাহিম:
ঢাকা জেলায় আশুলিয়া থানার পার্শ্ববর্তী বেক্সিমকোর সানসিটি প্রজেক্টে জমি ক্রয়ের নামে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে কোম্পানির আড়াই কোটি টাকাই জলে এবং সুনামধন্য কোম্পানির লোগো ব্যবহার করে ব্যক্তিগত অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা, শিরোনামে গণকন্ঠ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বেক্সিমকো গ্রুপের পক্ষে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত সংবাদ প্রকাশের পর বেক্সিমকো গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম তার ব্যবহৃত মুঠোফোন দিয়ে সাংবাদিকদের মামলা মোকদ্দমা সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি প্রদান করে আসছেন।
উক্ত কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম এর অধীনস্থ দুর্নীতিবাজ ম্যানেজার ইউনুস আলী কোম্পানির জমির সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন। জমি ক্রয় বিক্রয় সহ জমির সার্বিক বিষয় তিনিই দেখাশোনা করেন। ফর্মালিটি রক্ষার জন্য রিপোর্টিং বস হিসেবে জেনারেল ম্যানেজারকে শুধু অবগত রাখেন। ইউনুস আলীর উপর আরিফুল ইসলাম অন্ধবিশ্বাসী ও নির্ভরশীল হওয়ায় দূর্নীতিবাজ ইউনুস আলী তার স্বার্থ আদায়ের জন্য বিভিন্ন কৌশলে আরিফুল ইসলামকে যেমনটি বুঝান তিনি ঠিক তেমনটিই বুঝে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। সত্যিকার ভাবে জমির মালিকানায় কোম্পানির কতটা বৈধতা রয়েছে তা তিনি নিজেও পুরোপুরি অবগত নন। সাম্প্রতিক সময়ে ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে গণকন্ঠ পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভূল ব্যাখ্যা বুঝিয়ে ইউনুস আলী সাংবাদিকদের উপর আরিফুল ইসলামকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছেন।
জেনারেল ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম বলেন, মোতালেবের নিকট থেকে ওসমান কায়সার চৌধুরীর আমমোক্তারনামা দলিলে জমি মালিক হয়ে বেক্সিমকো কোম্পানির নামে সাব কবালা দলিলে জমি হস্তান্তর করেছেন। কোম্পানি যদি মোতালেবের নিকট থেকে জমির মালিক হয়ে থাকে, তাহলে সিরাজ মেম্বারকে জমির মূল্য বাবদ আড়াই কোটি টাকা কেন দিলো? জবাবে তিনি বলেন, নাদাবী দলিল মূলে সিরাজ মেম্বার জমির মালিক হওয়ায় তাকে টাকা প্রদান করা হয়েছে। এমন বিভ্রান্তিকর অবস্থায় প্রশ্ন জাগে যে, জমির মালিক মোতালেব নাকি সিরাজ মেম্বার ? সিরাজ মেম্বার দেড় বছর আগে জমির টাকা নিয়ে অদ্যাবধি কোম্পানিকে জমি দলিল করে দিতে পারছে না কেন? সিরাজ মেম্বার জমি বিক্রি করেছে তাই জমি দলিল করে দেওয়ার দায়িত্বও সিরাজ মেম্বরের। কিন্তু ইউনুস আলী জেনারেল ম্যানেজার আরিফুল ইসলামকে দিয়ে বেক্সিমকো কোম্পানির দাপট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপর প্রভাব খাটিয়ে কোম্পানির টাকায় ও জনবলে সিরাজ মেম্বারের খতিয়ান সংশোধনে এত তৎপর ও মরিয়া হয়ে উঠেছেন কেন? আর জেনারেল ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম কেনই বা দুর্নীতিবাজ ইউনুস আলীকে আশ্রয় পশ্রয় দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন ? আরিফুল ইসলাম কোন দুর্বলতার কারনে ইউনুস আলীর কাছে কি জিম্মি। নাকি আড়াই কোটি টাকার মধ্যেই রয়েছে তাদের ভাগবাটোয়ারা ?
আবদুল মোতালেব জানান, তৎকালীন সময়ে জমিদারদের
বন্দবস্ত পাট্রা দলিল মূলে তিনি ১৫.৫৮ এর জমির মালিক। সরকার উক্ত জমির মালিকানা দাবী করলে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ১১৭৫/৮৫ মামলা দায়ের করে ১৯৯০ সালে মামালার ডিগ্রিসহ অন্যান্য মামলার রায়ে চুড়ান্তভাবে জমির মালিকানা লাভ করেন। তিনি আরো বলেন, ওসমান কায়সার চৌধুরীর আমমোক্তারনামা দলিলটি রদ রহিত (পুন্ড) করা হয়েছে। ২০৪/২০০৭ মামলার রায়ে বেক্সিমকো কোম্পানির ৬১৬ নং জোতটি বাতিল করে মূল জোতে জমি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোতালেব জমির মালিক থাকাবস্থায় এম এ করিম ও তার স্ত্রীসহ কাজলকে সাফ কবলা দলিল মূলে এসএ,আরএস ৩২/২৩ দাগ হতে ৫ একর জমি হস্তান্তর করেছেন। এরপর এম এ করিম তার স্ত্রী ও কাজলের নিকট হতে জমি প্রাপ্ত হয়ে, একক ভাবে ৫ একর জমির মালিক হয়ে নিজ নামে ১০১৪ নং জোত খুলে বাংলা ১৪১৮ সাল নাগাদ যথারীতি খাজনা প্রদান করে আমমোক্তারনামা দলিলে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান র্পুবক মোঃ মোক্তার হোসেনকে আমমোক্তার নিয়োগ করেছেন। উক্তরুপে উল্লেখিত ৫ একর জমির বর্তমান জমির মালিক এম এ করিমের ধারাবাহিকতায় মোঃ মোক্তার হোসেন। এ বিষয়ে কাশিমপুর ভূমি অফিসে যোগাযোগ করলে মোতালেবের কথার সততা মিলে।
মোতালেব চ্যালেঞ্জ করে বলেন, তিনি সিরাজ মেম্বারকে কোন নাদাবী দলিল দেন নাই । সিরাজ মেম্বার তার স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করে নাদাবী দলিল তৈরি করেছে। বেক্সিমকো কোম্পানির জমির দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার ইউনুছ আলী যদি মামলার বিষয়ে একটু তৎপর হতো তাহলে সিরাজ মেম্বার নাদাবী দলিল মূলে কোন ভাবেই এ মামলায় ডিগ্রি পায় না।
নাদাবী দলিলে জমি হস্তান্তরের বিষয়ে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একজন ভূমি আইনজীবী বলেন, ভূমি আইনে নাদাবী দলিলে জমি হস্তান্তর করা বা মালিকানা হওয়ার কোন বৈধতা বা সুযোগ নাই। মোতালেব আরো বলেন, ম্যানেজার ইউনুস আলী আর্থিক সুবিধার লোভেই মামলার সমঝোতা চুক্তির নামে ২৭/০৪/২০১৯ তারিখে কোম্পানির পক্ষে নিজে স্বাক্ষর করে সিরাজ মেম্বারকে আড়াই কোটি টাকা প্রদান করেছে।
এ বিষয়ে ম্যানেজার ইউনুস আলীর নিকট জানতে চাইলে, তিনি জমি ক্রয়ের বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকা প্রদানের বিষয়টি জেনারেল ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম এর উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সার্বিক বিষয় জানতে আরিফুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা আর সম্ভব হয়নি। সানসিটি প্রজেক্ট অফিসার মোকাদ্দেছ আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তৎকালীন সময়ে চাকুরিতে যোগদান করি নাই সুতরাং এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
মোঃ মুক্তার হোসেন জানানঃ সিরাজ মেম্বারকে টাকা প্রদানের আগেই আমি একাধিক বার ম্যানেজার ইউনুস আলীর নিকট জমির বৈধ কাগজপত্রসহ গিয়েছি। কিন্তু ঐ অসাধু দূষ্কৃতি দুর্নীতিবাজ ম্যানেজার আমাকে পাত্তা না দিয়ে দূর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছে। সিরাজ মেম্বারের সাথে জড়িত সকল দুর্নীতিবাজ ও দূষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতি, প্রতারণার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আকুল আাবেদন উল্লেখিত বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে।